কুরআন মাজীদ চৌদ্দশত বছর পূর্বেই ঘোষণা করেছে, “তোমরা
নিজ নিজ ঘরে স্থির থাক”। এই ঘরই তোমাদের দুনিয়া ও আখিরাত, এই ঘরই তোমাদের জীবন।
পুরুষ ঘর থেকে বের হয়ে বড় বড় কাজের আঞ্জাম দিচ্ছে, অতএব তুমিও ঘরে থেকে বড় বড়
কাজের আঞ্জাম দিবে। একটু এ কথা চিন্তা কর, সমস্ত বড় বড় কাজের ভিত্তিই হল ঘর। যদি
তোমার সন্তানকে সঠিকভাবে লালন-পালন কর এবং তাদের অন্তরে ঈমান পয়দা করতে পার, তাদের
মধ্যে খোদাভীতি এবং নেক আমল পয়দা করতে পার তাহলে এই বিশ্বাস রাখ যে, পুরুষ বাইরে
বের যত বড় বড় কার্য সম্পন্ন করছে তাদের সমস্ত কাজের চেয় তোমাদের এই কাজ শ্রেষ্ঠ
হবে যে,তোমরা একটি সন্তানের লালন-পালন এবং শিক্ষা দ্বীন অনুযায়ী করেছ। পাশ্চাত্যের
বিপথমুখী প্রোপাগান্ডা এবং পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুসরণ আমাদের সমাজের নারীদের থেকে
সন্তানের দ্বীন শিক্ষার চিন্তাকে ধীরে ধীরে খতম করতে শুরু করেছে আর যেসব মহিলা
এখনও ঘরে আছে তারাও কখনও কখনও এই চিন্তায় পড়ে যায় যে, বাস্তবিক পক্ষে এসব লোকেরা
সঠিক বলছে, আমরা ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী হয়ে গিয়েছি। আর যেসব মহিলা ঘর থেকে
বের হয়েছে সম্ভবত তারা আমাদের থেকে বেশী উন্নতি করেছে। কিন্তু খুব ভাল করে বুঝে
নিন, মহিলারা নিজ ঘরে বসে যে খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছে তার কোন বিকল্প নেই। আর যে খেদমত
ঘরে বসে আঞ্জাম দেওয়া যায় তা ঘর থেকে বের হয়ে বাজারে গিয়ে, দোকানে বসে আঞ্জাম
দেওয়া যায় না।
নারীগণ যেন এটা মনে না করে যে,পর্দা তাদের জন্য কষ্টের
কারণ। কেননা নারীর সৃষ্টির মধ্যে গণ্য। আওরত(নারী) শব্দের অর্থই হল গোপন বস্তু। আর
পর্দা নারীর স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত। যদি প্রকৃতি বিকৃত হয়ে যায় তাহলে তো তার কোন
চিকিৎসা নেই। কিন্তু যে শান্তি ও আরাম পর্দার মধ্যে পাওয়া যাবে তা পর্দাহীনতা ও
বেহায়াপনার মধ্যে পাওয়া যাবে না। অতএব পর্দার সংরক্ষণ লজ্জার একটি আবশ্যকীয় অংশ।
আজ মনে হয়, রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
)-এর দৃষ্টি যেন বর্তমান কালের অবস্থা দেখতে পাচ্ছিল। হুযুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ) বলেছেন, কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে এমন মহিলা হবে যাদের মাথার চুল
দূর্বল উটের কূজের মত হবে। রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )-এর সময় উটের
কূজের মত চুল রাখা কল্পনা করাও যেত না। আর বর্তমানের অবস্থা দেখুন।
রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আরও বলেছেন,
ঐ সমস্ত মহিলা বাহ্যিক দৃষ্টিতে পোশাক পরিহিতা হবে কিন্তু তা এমন হবে যা দ্বারা
পোশাকের উদ্দেশ্য অর্জিত হয় না। এ জন্য যে, ঐ পোশাক এত পাতলা যে, শরীরের সমস্ত
উঁচু-নিচু অংশ প্রকাশিত হয়ে যায়। আর এসব কিছু লজা শেষ হয়ে যাওয়ার ফল। ইতিপূর্বে
কল্পনা করাও যেত না, তারা এসব পোশাক পরবে। কারণ তাদের অন্তরে লজ্জা ছিল এবং তাদের
স্বভাব এমন ছিল, তারা এরকম পোশাক পরা পছন্দ করত না। কিন্তু আজ বুক খোলা, গলা খোলা,
বাহু খোলা-এ কেমন পোশাক? পোশাক তো শরীর ঢাকার জন্য ছিল যা নারীকে তার প্রকৃত
সৃষ্টির প্রতি ধাবিত করার জন্য ছিল। এখন ঐ পোশাক শরীর ঢাকার পরিবর্তে শরীরকে আরও
বেশী প্রকাশিত করার কাজ আঞ্জাম দিচ্ছে।
বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠানে বেহায়াপনার দৃশ্য ঐ সকল পরিবারেও দৃষ্টিগোচর হচ্ছে যারা
নিজেদেরকে দ্বীনদার বলে থাকে। যে সমস্ত পরিবারের পুরুষেরা প্রথম কাতারে নামাজ পড়ে
তাদের পরিবারের বিয়েশাদীর অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখুন কি হচ্ছে। এক সময় এমন ছিল যখন এটা
কল্পনা করাও যেত না যে, বইয়ের অনুষ্ঠানে পুরুষ ও মহিলাদের মিশ্রিত জমায়েত হবে।
কিন্তু এখন তো নারী পুরুষের সম্মিলিত দাওয়াতের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। মহিলারা সেজেগুজে
পরপাটি হয়ে শোভাবর্ধন করে সুসজ্জিত হয়ে সম্মিলিত দাওয়াতে আসে। না পর্দার কোন
চিন্তা আছে, না লজ্জা শরমের কোন খেয়াল আছে।
আবার ঐ সমস্ত অনুষ্ঠানের ভিডিও ফিল্ম তৈরী হচ্ছে। যে
ব্যক্তি ঐ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেনি, ঐ সব দৃশ্যের আনন্দ উপভোগ করতে পারেনি, যাতে
করে যে ঐ সব দৃশ্য থেকে আনন্দ উপভোগ করতে পারে। এত সব কিছু হচ্ছে তারপরেও আমরা
দ্বীনদার, নামাজী, পরহেজগার। এত কিছু হওয়া সত্ত্বেও আমাদের কানে পানি যাচ্ছে না,
কপালে ভাঁজ পড়ছে না এবং উহা বন্ধ করার কোন খেয়াল অন্তরে জাগ্রত হচ্ছে না। বলুন!
তারপরও কি সমাজে বিশৃংখলা ঘটবে না? অশান্তি –অস্থিরতা সৃষ্টি হবে না? আজ আমাদের
জান-মাল, ইজ্জত-সম্মান বিপদের সন্মুখীন। এ সব কেন হবে না?
এটা তো আল্লাহ্ তায়ালার অশেষ অনুগ্রহ এবং হুযুর (
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )-এর বরকত যে, আমাদের উপর এখনও এরকম আযাব নাজিল
হচ্ছে না যাতে সবাই ধ্বংস হয়ে যায়। তা না হলে আমাদের আমল তো এরকম যে, আযাব দিয়ে
আমাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হত।
এসব কিছু বাড়ীর বড়দের অবহেলা এবং উদাসীনতার ফল যে, তাদের
অন্তর থেকে অনুভূতি শেষ হয়ে গেছে। বর কেউ নেই, বাঁধা দেওয়ার কেউ নেই, সন্তান
জাহান্নামের দিকে দৌঁড়ে যাচ্ছে, কেউ তাকে হাতে ধরে বাঁধা দিচ্ছে না। কোন পিতার
অন্তরে এই খেয়াল আসে না, আমরা আমাদের সন্তানকে জাহান্নামের গর্তে ঠেলে দিচ্ছি।
রাত-দিন সবকিছু চোখের সামনে হচ্ছে। যদি কেউ তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করে, তাহ তারা
বলে, আর ভাই! এরা তো যুবক মানুষ করতে দাও তাদের কাজে বাঁধা সৃষ্টি করো না। এভাবে
সন্তানের সন্মুখে হাতিয়ার সমর্পণ করার ফলে অব্থা এই পর্যন্ত পৌঁছেছে।
এখনও সময় চলে যায়নি। এখনও যদি বাড়ীর কর্তা এবং অভিভাবক
দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয় যে, এ সমস্ত কাজ হতে দেব না। আমাদের বাড়ীতে নারী-পুরুষের
সম্মিলিত অনুষ্ঠান হতে দিব না। আমাদের বাড়ীতে মহিলাদের পর্দাহীন অবস্থায় কোন
অনুষ্ঠান করতে দিব না, ভিডিও ফিল্ম হতে দিব না। যদি বাড়ীর কর্তা এরকম সংকল্পবদ্ধ
হয় তাহলে এখনও এই বন্যার মুখে বাঁধ দেয়া সম্ভব। এমন হয়নি যে, এই বন্যা ক্ষমতার
বাইরে চলে গেছে। অতএব, ঐ সময়কে ভয় কর যখন কোন হিতাকাঙ্খী ব্যক্তি এই অবস্থা
পরিবর্তন করার চেষ্টা করবে কিন্তু সম্ভব হবে না। কমপক্ষে ঐ সমস্ত পরিবার যারা
নিজেদেরকে দ্বীনদার বলে থাকে, যারা দ্বীন ইসলামের নাম উচ্চারণকারী এবং বুযুর্গদের
সঙ্গে সম্পর্কস্থাপনকারী। তারা তো কমপক্ষে এরূপ দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করবে যে, আমরা
এরকম সম্মিলিত জমায়েত হতে দিব না।
|
|||
Rate This |
||
|