মুসলিম সমাজে একটি হাদীস প্রচলিত আছে, "মুসলিম উম্মত ৭৩টি দলে বিভক্ত হবে, যার মধ্যে একটি মাত্র দল জান্নাতী, আর বাদবাকি সবাই জাহান্নামী।" হাদীসটি কতটা সহীহ, আমি জানি না। তবে এ হাদীসটির দোহাই দিয়ে প্রত্যেকটা দল বা মাজহাবই নিজের দলকেই একমাত্র হক ফেরকা বলে প্রচার করছে, আর বাদবাকি সবাইকে একবাক্যে বাতিল ও বিপথগামী সাব্যস্ত করছে। হাস্যকর এই অসুস্থ প্রবণতাটি বিশেষ করে দুইটি দলের মধ্যে সবচাইতে বেশি পরিলক্ষিত হয়। এই দু'দলের মাঝে আবার সাপে নেউলে সম্পর্ক। একটি দলের কাছে অপর দলটি নির্ঘাত কাফের ও সকল ফেতনার মূল।
এবার দ্বিতীয় দলটিকে বলি, যদি তোমার ফেরকাটাই জগতের একমাত্র হক ফেরকা হয়ে থাকে, তাহলে—
একথা ঠিক যে, কোন ধর্ম বা মতবাদের অনুসারী কিছু ব্যক্তির অপকর্মের জন্য সেই ধর্ম বা মতবাদকে দায়ী করা যায় না। যেমন, কোন মুসলিমের ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণা ও অন্যায় অপকর্মের জন্য ইসলামকে দায়ী করা যায় না। ইসলামকে বিচার করতে হয় ইসলামের মূল উৎস তথা কোরআন ও হাদীস দিয়ে, আল্লাহ ও রসূলের (সা.) কথা দিয়ে। কিন্তু কোন ফেরকা, দর্শন বা মতবাদের মূল প্রবক্তা, প্রচারক ও ধারক-বাহক এবং সেই সাথে প্রায় সকল অনুসারীগণ যদি কিছু কমন কথাবার্তা ও ধ্যান-ধারণা প্রচার করে, তখন সেটাকে উক্ত মতবাদের মূলনীতি হিসেবেই বিবেচনা করা চলে। যেহেতু দ্বীন এসেছে আল্লাহর তরফ থেকে এবং তা মানুষের মাঝে পরিচিত হয়েছে আল্লাহর রসূলের (সা.) মাধ্যমে, সেহেতু দ্বীনের শুদ্ধতা শুধু আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা দিয়েই বিচার করা যায়, আল্লাহর কোন সাধারণ বান্দা বা নবীর (সা.) কোন সাধারণ উম্মতের কথাবার্তা ও কৃতকর্ম দিয়ে দ্বীনকে বিচার করা যায় না। কিন্তু ফেরকা, মাযহাব বা উপদল যেহেতু মানুষের মনগড়া, সেহেতু কোন ফেরকা সহীহ বা ভ্রান্ত হওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ফেরকার প্রবর্তক ও প্রচারকগণের ভূমিকা ও বক্তব্য দেখেই বিচার করা যায়। আর সত্যি বলতে কি, দ্বীনের মাঝে ফেরকাবাজি ও দলাদলি জিনিসটাই নিষিদ্ধ ও অনাকাঙ্ক্ষিত। মুসলিম বিশ্বে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রভাবশালী মহল নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় এ দুটি গোষ্ঠীকে দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের ক্ষমতার লালসার শিকার হয়ে মুসলিম তরুণরা নিজেদের দুনিয়ার জীবন ও আখেরাতের জীবন নষ্ট করছে। মুসলিম যুব সমাজ দুটি ফেরকায় বিভক্ত হয়ে হানাহানি করে অপঘাতে মরলেও তাদের মাঝে বিভেদমূলক ধ্বংসাত্মক চিন্তার সঞ্চারকারী মহলদ্বয়ের রাজকীয় ভোগবিলাসে কোন কমতি হচ্ছে না। তারা কিন্তু নিজ নিজ রাজত্ব ও প্রভাব বলয়ের মধ্যে বহাল তবিয়তে সুরক্ষিত অবস্থায় আছে এবং ধর্মের নামে ভ্রান্ত আবেগ উষ্কে দিয়ে সাধারণ মুসলিম জনগণের সর্বনাশ করে নিজেদের রাজত্ব বিস্তারের নেশায় মেতে উঠেছে। এই দুটি মহলের মধ্যে একটি মহল ইহুদীবাদীদের সাথে এবং আরেকটি মহল নাস্তিকদের সাথে প্রকাশ্য ঐক্য গড়ে তুলেছে এবং তাদের নোংরা ক্ষমতালিপ্সা ও আধিপত্যবাদী নেশার ভিকটিম হচ্ছে শুধু মুসলিম উম্মাহ। বর্তমান, নিকট অতীত ও দূর অতীত বিশ্লেষণ করে ইসলাম ও মুসলমানের কল্যাণে এ দুটি গোষ্ঠীর ইতিবাচক অবদান খুব কমই পাওয়া যায়। ইতিবাচক অবদান বলতে একটি গোষ্ঠীর দ্বারা আফগানিস্তানে রুশবিরোধী জিহাদ এবং অপর একটি গোষ্ঠীর দ্বারা মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলী আধিপত্য মোকাবেলায় কিছুটা ভূমিকা পাওয়া যায়। কিন্তু সে তুলনায় তাদের নেতিবাচক ভূমিকার পাল্লাই অনেক ভারী বলে মনে হয়। মুসলমানদের যেকোন ক্রান্তিলগ্নে উল্লেখিত দুটি সম্প্রদায়কেই ইসলামের শত্রুদের সাথে হাত মিলিয়ে মুসলমানদের পতন ঘটাতে একেবারে সময়মত এগিয়ে আসতে দেখা গেছে। হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদ ধ্বংসে বাগদাদের শিয়া মন্ত্রীর বিশ্বাসঘাতকতা, টিপু সুলতানের সাহায্যার্থে আহমদ শাহ আবদালীর বংশধরের এগিয়ে আসতে চাইবার প্রাক্কালে ইরানের শাহের আফগানিস্তানে আগ্রাসন, আফগানিস্তানে রুশ ও মার্কিন আগ্রাসনকালে এবং ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনকালে আন্তরিক ও সক্রিয়ভাবে সহযোগিতার উদার হস্ত বাড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি হলো তাদের একটি মহলের কীর্তি। অপর মহলটির কীর্তির মধ্যে রয়েছে ইরান-ইরাক যুদ্ধ বাধানো, ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ক্রুসেডারদেরকে মুসলিম ভূখণ্ডে নিয়ে এসে ঘাঁটি গাড়ানো, মিশরের মুরসীকে উৎখাত করে ইসলামবিরোধী ইহুদীবাদী সিসির জান্তাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা ও গণহত্যার মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হাজার হাজার কোটি ডলার দিয়ে সহায়তা করা, ইসরাইলের গাজা আগ্রাসনের সম্পূর্ণ খরচ বহন করা ইত্যাদি।
আলোচিত দুই অশুভ শক্তির খপ্পর থেকে আমাদের সন্তানদেরকে বাঁচাতে হলে নিম্নলিখিত সুপারিশমালা বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে:- (১) খোলাফায়ে রাশেদীনের জীবনী ও চরিত্র শিক্ষা দিতে হবে। তাহলে তাঁদের নামে কেউ নেতিবাচক কথা বললেই তাদের আসল পরিচয় ধরতে পারবে। ফলে শিয়াবাদ বা বিকৃত সুফিবাদের প্রচারণা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। (২) কারবালায় ইমাম হুসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগ ও ইয়াজিদের নিষ্ঠুরতার ইতিহাস অবহিত করতে হবে। তাহলে অন্তত এই একটি পয়েন্টে এসে সালাফীরা ধরা খাবে। নবী পরিবারের প্রতি অবজ্ঞা এবং নবী পরিবারের উপর হত্যাযজ্ঞ পরিচালনাকারী ব্যক্তির প্রতি সালাফিদের অনুরাগ দেখলেই আমাদের সন্তানেরা তাদের ভ্রান্তি ও মিথ্যাচার বুঝে যাবে এবং অন্য সকল ব্যাপারেও তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ধ্বংসের মাঝে নিপতিত হবার আশংকাটা কমে যাবে। (৩) জরুরী প্রয়োজন (যেমন, হজ্জ-উমরা, চিকিৎসা বা চাকুরী ইত্যাদি) ছাড়া উক্ত দেশ দুটিতে ভ্রমণ করাকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। বিশেষ করে লেখাপড়ার জন্য ঐ দেশগুলো মাড়ানো যাবে না। তাদের দূতাবাস ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো থেকেও সন্তানদেরকে যথাসম্ভব দূরে রাখতে পারলে উত্তম। (৪) তাওহীদ ও রিসালাত সম্পর্কিত সঠিক আকীদা শিক্ষা দিতে হবে। আল্লাহ, নবী-রসূল, ফেরেশতা, সাহাবা, আউলিয়া সকলের সত্ত্বা ও মর্যাদা সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে হবে; যাতে এ ব্যাপারে কোন কমবেশি করা বা গোলমাল পাকিয়ে ফেলার চিন্তা ভবিষ্যতে সন্তানদের মনে প্রশ্রয় না পায়।
|
|||
Rate This |
||
|
চমৎকার একটি লেখা, ধন্যবাদ আপনাকে।
==<>== ==<>== ==<>==
"আমার বিশ্বাসই আমার শক্তি।"
==<>== ==<>==
ফেরকাবাজি, অন্ধ আনুগত্য ও বেদাতফোবিয়া নিয়ে একটি কৌতুক
আলোচ্য বিবদমান দুটি পক্ষকেই শয়তানের দল বলে মনে হয়। এক হুজুরের ঝাড়ায় জিনদের জবানবন্দিতে কোথাও মাজারে জিনদের উপদ্রব ও কেরামতির পিছনে জিনদের কারসাজির তথ্য উঠে এসেছে, আবার কোথাও কোন কোন চরমপন্থী গোষ্ঠীর জিন ও কুফরী যাদুর সাথে সম্পৃক্ততার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এজন্যই বোধকরি অনেকেই ঐ হুজুরকে পছন্দ করে না। কিন্তু অপছন্দের আসল কারণটা স্বীকার করার পরিবর্তে 'জিনের সাথে যোগাযোগ' জায়েয কিনা সেই ধুয়া তুলে উক্ত হুজুরকে জব্দ করা হয়।